ঝালকাঠি ব্যুরো ॥ ঝালকাঠি কারাগারের এক কারারক্ষী জাহিদ ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর অপর এক কারারক্ষী সুমন মৃধা মাদকাসক্ত আসামীদের কাছে গোপনে মাদকাদ্রব্য সরবরাহ সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঝালকাঠি জেলা কারাগার অভ্যন্তরে কারা কর্র্তৃপক্ষের ব্যপক কঠোরতায় দেশের বিভিন্ন কারাগারের তুলনায় এখানে অভ্যন্তরীন নিয়ম শৃঙ্খলা বেশ ভালো থাকলেও কারারক্ষী সুমন মৃধার জন্য তা ভেস্তে যেতে বসছিলো। ঝালকাঠি কারাগারের মাদক নির্মুল কামিটির সভাপতি সুবেদার নজরুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাহির থেকে আসামী কারা গেটে প্রবেশের পর ৩ স্তরে তল্লাশী করা হয়। মাদক সহ কোন ধরনের বন্তু ভিতরে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। জেলার তরিকুল ইসলাম দখিনের খবরকে জানান, অফিস ডিউটির সুযোগে কারারক্ষী সুমন মৃধা অবৈধ ভাবে মাদক কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করাচ্ছে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে তাকে অফিস থেকে সারিয়ে গেটের বাইরে অভ্যর্থনা পয়েন্টে ডিউটি দিয়েছি। এবং বিষয়টি ডিআইজি (প্রিজন) স্যারকে অবহিত করি। ডিআইজি (প্রিজন) মোঃ সগির আহম্মেদ দখিনের খবরকে জানান, সুমনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পেক্ষিতে তাতক্ষনিক ব্যবস্থা ঝালকাঠি কারা কতৃপক্ষ নিয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলা হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে (৯ জুলাই সন্ধ্যায়) তিনি বলেন, আমার অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসলে তা তদন্ত পুর্বক ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গতকাল ১০ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে অভিযুক্ত সুমন মৃধাকে শেরপুর জেলা কারাগারে বদলী করা হয়েছে এমনই খবর নিশ্চিত করেছে ঝালকাঠির জেল সুপার শফিউল আলম।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠি কারাগারে দীর্ঘদিন যাবত মাদকাসক্ত আসামীদের কাছে মাদকদ্রব্য বিশেষ করে গাঁজা, ইয়াবা সরবারহ করে আসছিল কারারক্ষী জাহিদ হোসেন এবং সুমন মৃধা। জাহিদ হোসেন এক পর্যায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে যায়। জাহিদ হোসেন ৪০ পিচ ইয়াবাসহ প্রথমে গ্রেফতার হয় বরিশাল ডিবি পুলিশের হাতে ২০১৭ সালের ৬ জুলাই। সে মামলায় কয়েকমাস জামিন লাভ করে আবার সে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। জাহিদের ইয়াবা ব্যবসায় সহযোগীতা করতো কারারক্ষী সুমন মৃধা। সর্বশেষ ঝালকাঠি ডিবি পুলিশের হাতে ১০ পিচ ইয়াবাসহ গত ১৯ মে গ্রেফতার হয় জাহিদ। বর্তমানে জাহিদ ঝারকাঠি কারাগারে আটক আছে। কারাকর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। জাহিদের প্রধান সহযোগী সুমন মৃধা ঝালকাঠি কারাগারের অফিসে ডিউটি করার সুযোগে অপর কারারক্ষীদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে কারাগারে আটক চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। কারাগারের বাইরে মাদকাসক্তদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করে সুমন অর্থের বিনিময় কারাগারে মাদক সরবারহ শুরু করে। এ ছাড়া সুমন মৃধার বিরুদ্ধে কারাগারে আটক আসামীদের সাথে দেখা করতে আসা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আসামীদের ওকালত নামায় স্বাক্ষর নিতে জনপ্রতি একশ টাকা এবং প্রতিদিন জামিনপ্রাপ্ত আসামীদের কাছ থেকে ৫০০- ১০০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কারাগারে আটক ঝলকাঠির একজন সাংবাদিকের স্ত্রী স্বামীর সাথে দেখা করতে গেলে সুমন মৃধা তার কাছ থেকে স্পেশাল দেখার নামে পাঁচশত টাকা এবং ওই সাংবাদিক জামিনে বের হওয়ার দিন এক হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে ওই সাংবাদিক জেল সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
জাহিদ হোসেন ইয়াবাসহ একাধিকবার গ্রেফতার হলেও সুমন মৃধা সবসময় ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কারারক্ষী হিসেবে সুমনের মাসিক মূলবেতন ১৪ হাজার টাকা হলেও সে শহরে সাত হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্লাটে থাকেন। তার রয়েছে একটি পালসার মোটরসাইকেল। সম্প্রতি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কারাগারে আটক ১৫ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দেখা সাক্ষাতের ওপর কড়াকরি আরোপের নির্দেশনা দেওয়া হলেও কারারক্ষী সুমন অর্থের বিনিময় ওই ১৫ জনকে বিশেষ সুবিধা দিত বলে অভিযোগ রয়েছে। কারাগারের একাধিক কারারক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন একজন দুইজন লোভী কারারক্ষীর কারনে ঝালকাঠির ৫০ জন কারারক্ষীর সুনাম নস্ট হচ্ছিলো। তবে কারারক্ষী সুমন মৃধাকে শেরপুর জেলা কারাগারে বদলী করায় ঝালকাঠি জেলা কারাগারের সুনাম ও শৃঙ্খলা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন আসামীদের ভুক্তভুগি একাধীক অবিভাবকরা।
Leave a Reply